কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়াই নদীর কুল থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে হুমকিতে পড়েছে নদীর পাড়, গ্রামীণ সড়ক ও কৃষি জমি। আইন অমান্য করে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় গত বুধবার থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিদিন শত শত গাড়ি মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধুরা নদীর কুল থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি খাস জমির মাটি বিক্রি করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী জামাল, মিঠু ও যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর সদস্য আবুল কালাম প্রকাশ্যে মাটি কেটে সেলোইঞ্জিন চালিত অবৈধ লাটাহাম্বা গাড়িতে তা বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করছেন। এতে হুমকিতে পড়েছে নদীর পাড় ও কৃষি জমি। ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। দ্রুতগামী অবৈধ লাটাহাম্বার কারণে সড়কে স্বাভাবিক চলাচল ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত অবৈধ মাটিকাটা বন্ধের দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদীর কুল ও সড়ক ঘেঁষে কলা, বেগুন, শাক – সবজিসহ হরেকরকম ফসল। আর গ্রামীণ কাঁচা সড়কটি কেটে গাড়ি উঠা-নামানোর পথ করা হচ্ছে। গড়াই নদীপাড়ের প্রায় ৫০ মিটার দুর থেকে ভ্যেকু দিয়ে মাটি কেটে তা লাটাহাম্বা গাড়িতে রাখা হচ্ছে। সেখানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক ও কয়েকটি লাটাহাম্বা গাড়ি রয়েছে। তবে শ্রমিকরা মাটি কাটার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কে কার মাটি কিভাবে কাটছে তাও বলেননি তারা।
আরো দেখা যায়, গড়াই নদীর কুলঘেঁষে মাটি কাটার জন্য পথ তৈরি করছেন স্থানীয় কৃষক মজিবর রহমান (৫৫)। তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। এখানে ভাল ফসল হয়না। সেজন্য প্রতি গাড়ি ২৮০ টাকা দরে ভাটায় মাটি করছি। গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক টুটুল হোসেন বলেন, অবৈধভাবে মাটি কাটায় অন্যান্য কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়ছে। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কিছু বললেই আসে নানান বাঁধা-হুমকি। তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ভাল রাস্তা কেটে গাড়ি তোলার পথ করছে। এতে মানুষ ও অন্যান্য গাড়ি চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, শীতকাল আসলেই নদী থেকে মাটি – বালু কাটা হয়। শত শত অবৈধ গাড়ি চলে সড়কে।
কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। তিনিও মাটি কাটা ও অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধের দাবি জানান। অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন তিনি চরে যাননা। কে বা কাহারা মাটি কাটছে তা তিনি জানেন না। অভিযুক্ত প্রভাবশালী জামাল হোসেন বলেন, তিনি টাকা দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে মাটি কিনে ভাটায় বিক্রি করছেন। এটা অবৈধ কিছু না। কুষ্টিয়া পাউবোর উপসহকারি প্রকৌশলী ইয়ামিন হক বলেন, চলতি বছরেই ওই এলাকায় নদী শাষণ করে পাড় বাঁধা হয়েছে। মাটি কাটলে পাড় ধসে যেতে পারে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে পুকুর খনন বা মাটি কাটাও আইনে নিষেধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিরুল আরাফাত। তিনি জানান, খুব দ্রুতই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।