কুষ্টিয়ার বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও অস্বস্তিতে ক্রেতারা

নিজ সংবাদ ॥ কোন ভাবেই হাতের নাগালে রাখা যাচ্ছে না নিত্য প্রয়োজীয় দ্রব্যের মূল্য। যার ফলে চাকুরী জীবি থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিনমুজুরদের অবস্থা দিনকে দিন আরো খাপার হতে চলেছে। আয়ের সাথে ব্যয় কোন ভাবেই ঠিক থাকছে না। যা ফলে দিনে দিনে হতাশায় ভুগতে শুরু করেছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা। কুষ্টিয়ার বাজার গুলোতে গত সপ্তাহের তুলনায় অধিকাংশ সবজি কিছুটা কম দামে বিক্রি হতে গেছে। সেই দুই একটি সবজির দাম আবার নতুন করে বেড়েছে।গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রায় ক্রেতাশূণ্য বাজার। আর এর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্দ্ধমূখী মূল্যকেই দায়ী করছেন সাধারন ব্যবসায়ীরা।বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেচি পেঁয়াজের দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, প্রতি কেজি কাঁচা মচিরে দাম গত মঙ্গলবার ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও গতকাল বুধবার তা ৪০ টাকা কমে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। প্রতি কেজি আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে।

আলুর দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে পটলের দাম। প্রতি কেজি আলুর দাম ৬০ টাকা হলেও ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। গত সপ্তাহের তুলনায় ফুলকপির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ফুলকপি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হলে গতকাল তা ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফুলকপির সাথে দাম কমেছে বেগুনের। গত সপ্তাহের কেজি প্রতি প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি ঝিঙি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহের মতই সিমের দাম প্রায় অপরিবর্তিত। প্রতি কেচি সিমের দাম ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়ও শশার কেজি ৪৫ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা কেজি, প্রতি পিচ লাউ আকার ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা এবং মিষ্টি মুমড়ার কেজি ৬০ টাকা। সেই সাথে লাল শাকের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা হলেও পালং শাকের দাম কিছুটা চড়া।

প্রতি কেজি পালং শাকের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। লাল শাক এবং পালং শাকের তুলনায় অনেকটা সস্তা পুঁই ও কলমি শাকের দাম। প্রতি কেজি পুঁই ও কলমি শাকের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা।সবজির দামের মত মাংশের দামও কিছুটা কমেছে গত সপ্তাহের তুলনায়। দেশী মুরগীর দাম অপরিবর্তিত থাকলে কিছুটা কমেছে ব্রয়লার এবং সোনালী মুরগীর দাম। প্রতি কেজি দেশী মুরগীর দাম ৫০০ টাকা, প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি সোনালী মুরগীর দাম ২৮০ টাকা। গত সপ্তাহরে মতই রয়েছে হাঁসের দাম। প্রতি কেজি হাসের দাম রয়েছে ৪০০ টাকা।অন্যদিকে গরুর মাংসের মূল্য কিছুটা কমলেও খাসি এবং বকরির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা, প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম ১০০০ টাকা এবং প্রতি কেজি বকরির মাংসের দাম ৯০০ টাকা।

সবজি এবং অনান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় মাছের দাম অনেকটা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় রুই মাছের দাম ৩৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি ছোট রুই মাছের দাম ২৩০ টাকা। এছাড়াও প্রতি কেজি মৃগেল মাছের দাম ২৬০ টাকা, প্রতি কেজি বড় পাঙ্গাস মাছের দাম ১৮০ টাকা এবং প্রতি কেজি ছোট পাঙ্গাস মাছের দাম ১৪০ টাকা।সাইফুল নামের ক্রেতা জানান, দেশী মুরগীর দাম ৫’শ টাকা করে, কিন্তু সোনালী মুরগীর দাম কমে আর বাড়ে। আজকে সোনালী মুরগীর দাম প্রতি কেজি ২’শ ৮০ টাকা। জিনিসের দাম কমে আর বাড়ে কিন্তু রোজগার তো বাড়ে না। এইভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।অপর ক্রেতা বলেন, সরকার আসে সরকার যায়। সাধারণ মানুষ তার সুফল পায় না। কোন সরকারই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে না। সবাই ধান্দা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের পদক্ষেপ দেখতে চাই। শুধু উন্নয়ন আর ভাষন দিয়ে কি পেট ভরে। রোজগারের তুলনায় খরচ অনেক বেশী।

এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশে গৃহ যুদ্ধ লেগে যাবে।সবজি বিক্রেতা রতন জানান, অনান্য দিনের তুলনায় আজকে (বুধবার) সবজির দাম বেশী। প্রতি কেজি বেগুণ গতকাল (মঙ্গলবার) ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও তা আজকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৪ ঘন্টায় পটলের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়েছ। একদিন আগেও প্রতি কেজি পটল ৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও আজ তার দাম ৫০ টাকা। আমদানী কম হওয়ার কারনেই দাম বেড়ে বলে জানান এই সবজি বিক্রেতা।বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক মো. আমিরুল ইসলাম ক্ষোভ নিয়ে জানান, যখন জিনিসের দাম বাড়ে তখনই মিডিয়ায় তোলপাড় হতে দেখা যায়। কিন্তু সবজি উৎপাদন করতে সার প্রয়োজন হয়, সারের দাম বাড়লেও তা মিডয়াতে প্রকাশ করা হয় না। অথচ বাজারে সারের সহ প্রয়োজনীয় কীটনাশকের দাম বেড়েই চলেছে।

তবে সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের ভাষ্যমতে, সবজির উৎপাদন বেশী হলে দাম কম হয়। আর উৎপাদন কম হলে দাম বেশী হয়। সবজির দাম বাড়া বা কমার বিষয়ে সরকারের কোন হাত নেই। সরকারের এখানে কিছুই করার নেই। তবে বর্তমানে সবজির দাম তুলনামূলক অনেক কম এবং সামনে আরো কমে যাবে। কথা হলে সাইফুল নামের মাছ ব্যবসায়ী বলেন, আগের তুলনায় মাছের দাম অনেক কম। প্রতি কেজি বড় রুই মাছ আগে ৪’শ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকায় বিক্রি হতো, বর্তমানে ৩’শ থেকে ৩’শ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট রুই প্রতি কেজি ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মৃগেল মাছ ৩২০ টাকা থেকে কমে ২৫০ থেকে ২৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বড় চিংড়ি মাছের দাম কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কমেছে।

কয়েকদিন আগেও যে চিংড়ি মাছ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বর্তমানে তার প্রতি কেজির দাম ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। মাছের দাম আগের তুলনায় স্বাভাবিক আছে বলে জানান এই মাছ ব্যবসায়ী।মুরগী ব্যবসায়ী নাঈম জানান, দেশী মুরগীর দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ব্রয়লার ও সোনালী মুরগীর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে দাম কমে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এছাড়াও সোনালী মুরগী কেজি প্রতি প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Comment