নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার সময় কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান। সভার শুরুতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন মোঃ আকুল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক যশোর সেনা নিবাসের রওশন আরা রেজিমেন্টের সিও লেঃ কর্নেল মাহবুবুল আলম শিকদার, ৪৭বিজিবি অধিনায়ক মাহবুব মোর্শেদ, কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আকুল উদ্দিন প্রমুখ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া জেলা বৈসম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র জনতার প্রতিনিধি তাওহিদুল ইসলাম আকাশ, নাজমুস সাকিব, সুমন আহম্মেদসহ নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের মাঝে জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা করে চেক বিতরণ করা হয়। পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভ ও শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
স্মরণ সভায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি সন্তান হারা মায়ের আহাজারি ও আর্তনাদ। স্বামী হারা স্ত্রীর বুক ফাটা কান্না। তাদের প্রতি আমাদের সমাজের এবং রাস্ট্রের দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে। যেকোনো কাজ ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয়ভাবে করতে গেলে পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকে। তিনি বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ বা আহত হয়েছেন তাদের যে লিস্ট করা হচ্ছে, তা দেখে অনেকে ভয় পাচ্ছেন। আবার অনেকে লিস্ট প্রকাশ করতে বলছেন। কারণ লিস্টে পক্ষে বিপক্ষে লোক থাকতে পারে। যা পরে ক্ষতিকর দিক হতে পারে। তাই অনেকের নানা চাওয়া থাকে। কিন্তু আমাদের একটি চাওয়া ছিল স্বাধীনতা। আমরা সেই স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা পেয়েছি বলার এবং লেখার স্বাধীনতা। যেটি বিগত দিনে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছে।
আমি আমার মনের ভাষা ও মুখের ভাষা ব্যক্ত করতে পারেনি। সেই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশ ছোট, সম্পদ কম। জনসংখ্যা বেশি। এদেশের ইয়াং জেনারেশন আমাদের সম্পদ। তাই এই ইয়াং জেনারেশনকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে দেখবেন আমরা যে দেশ স্বাধীনতা পেলাম, সেটা সার্থক হবে। তিনি বলেন, আমাদের ভিতর একটা মন মানুষিকতা আছে। সেটা হলো আমি আইন মানব না, অন্য কেউ মানতে দেবো না। এই মাইন্ড সেটআপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন তারা সুন্দর একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। সমস্ত জায়গায় আইন প্রয়োগ করলে হবে না। আইন প্রক্ষার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। তাই প্রত্যেক নাগরিকের দায়বদ্ধতা আছে। যে মায়ের বুক খালি হয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে।
তাদের সে জায়গা পূরণ হবে না। আমরা তাদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও তারা আর ফিরে আসবেনা। আমরা যে যার মত চলে যাব। কিন্তু এসব শহীদ ও আহতদের পরিবারের কি হবে তা বলা যায় না। তবে আমাদের আসার বিষয় এটি যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে সরকারের এত আন্তরিকতা দেখেনি, কিন্তু আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য পজিটিভ। তিনি আরও বলেন, আমি প্রশাসক নই। আমি আপনাদের ভাই। প্রশাসনের কোন কর্মকর্তাকে আপনাদের শত্রু ভাববেন না। আমি আপনাদের সেবক হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। আমাদের সমস্যা অনেক। আবার সম্পদও সীমিত। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি বা সম্পদ হচ্ছে যুবশক্তি। আমরা যদি এই যুব শক্তিকে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমাদের কাঙ্খিত স্বপ্নের বাংলাদেশ বির্নিমাণ করা অসম্ভব নয়।