ইবি প্রতিনিধি ॥ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যাম্পাসজুড়ে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সংকট দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন সময় একাধিক ক্যামেরা লাগানো হলে সেগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকলেও সেগুলো সচল করার বিষয়ে প্রশাসনের কোন তদারকিও দেখা যাচ্ছে না। এতে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও আলোচিত ঘটনাগুলোর কোন ফুটেজ বা তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে চুরি, মারামারি, বহিরাগতদের অবাধে অনুপ্রবেশ, মাদক সরবরাহ ও অসামাজিক কার্যকলাপের মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, ডায়না চত্বর, শহীদ মিনার, মুক্তবাংলা, জিয়া মোড়, শেখ হাসিনা হল গেইট ও ডরমিটরি সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট বিশটি সিসি ক্যামেরা চালু করে তৎকালীন প্রশাসন। যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও আইসিটি সেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ২০টির মধ্যে মাত্র ২ থেকে ৩টি ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল, টিএসসিসি ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকার কোন সিসি ক্যামেরাই সচল নেই। টিএসসিসির চারপাশে একাধিক ক্যামেরা থাকলেও ২০২০ সালের পর থেকেই ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে।
এর আগে এই ভবনে একাধিক পরিচালক দায়িত্ব পালন করলেও এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেননি তারা। এদিকে গত শনিবার টিএসসিসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পানির ট্যাপ চুরির ঘটনা ঘটলেও ক্যামেরা না থাকায় চোর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলের প্রধান ফটক, করিডর, সামনে ও পিছনেসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ১৬ টি করে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। তবে ক্যামেরার আওতায় নেই সাদ্দাম হোসেন হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাদ্দাম হোসেন হলে কয়েকটি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও সেগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন থেকে ভিডিও ফুটেজও সংরক্ষিত হচ্ছে না। একই চিত্র দেখা গেছে শহীদ জিয়াউর রহমান হলেও। এছাড়াও অন্য হলগুলোতেও ১২ থেকে ১৩ করে ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ক্যামেরা না থাকায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা। সেখানে বিভিন্ন সময় লোহার তৈরি বেড়া ও সরঞ্জাম চুরির ঘটনা ঘটছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর ফটক, করিডর ও অভ্যন্তরে কিছু ক্যামেরা থাকলেও ভবনের চারপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যামেরার ব্যবস্থা নেই। এদিকে গত ১১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়টি ককটেল সদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। এঘটনায় ক্যামেরা না থাকায় নেপত্থে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে আলোচিত র্যাগিং কাণ্ডেও কোন সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলোচিত ঘটনাগুলোর কোন সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন সময় আবাসিক হলগুলোতে দেয়াল বেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়। অনেকবার হলগুলোতে মোবাইল ও ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে। পর্যাপ্ত ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় পরবর্তীতে দোষীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতদের দ্বারা আপত্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এমনকি বহিরাগতরাই ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহ করেন।
তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, টিএসসিসির অন্যান্য সংস্কারসহ সিসি ক্যামেরার বিষয়টিও আমাদের তদারকির মধ্যে রয়েছে। শীঘ্রই এই বিষয়ে প্রশাসনকে একটি নোট দিব। সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত হল প্রশাসনের আমলেই এসব সিসি ক্যামেরা বিকল ছিল। আমরা ধারাবাহিকভাবে হলের সব সমস্যার সমাধান করছি। শীঘ্রই সিসি ক্যামেরার বিষয়টিও সমাধানের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি মূলত প্রক্টরিয়াল বডির কাজ। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে প্রযুকিক্তগতভাবে সহায়তা করা। তাছাড়া ক্যামেরাগুলো প্রক্টরের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তবুও আমরা এ বিষয়ে প্রক্টরের সাথে কথা বলেছি। তারা একটি জরিপ করেছেন আশা করি দ্রুত ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসের যে-সব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ছিল সেগুলো বেশিরভাগই অকেজো। সেগুলো সংস্কার ও নতুন করে লাগানো হবে। এমনকি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করে সেখানেও সিসি ক্যামেরো লাগানো হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা এড়াতে ও ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এই বিষয়ে আমার প্রক্টর মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।